ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

ই-ইংক স্ক্রিন, যা ‘ইলেক্ট্রনিক পেপার ডিসপ্লে’ নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি ডিসপ্লে প্রযুক্তি; যা দেখতে হুবহু কাগজের মতো। যার ভিজিবিলিটি ও কনট্রাস্ট বেশ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। চোখে প্রভাব ফেলে এমন কোনও চাকচিক্য নেই (অনেকটা কাগজের মতো), কম বিদ্যুৎ খরচ, চোখের জন্য অনেকটা আরামদায়ক; এমন অনন্য প্রযুক্তির বৈশিষ্টের কারণে এই স্ক্রিন সাধারণত ই-বুক রিডার বা ই-রিডারে ব্যবহৃত হয়।

ই-রিডার এবং অন্যান্য ডিভাইসের (স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং টিভি প্রভৃতি) মধ্যে মূল পার্থক্যই হলো এই স্ক্রিনের প্রযুক্তি। ই-রিডার মূলত ‘ই-ইংক ইলেকট্রনিক পেপার ডিসপ্লে’ ব্যবহার করে, যা সাধারণত ই-পেপারও বলা হয়ে থাকে। এই স্ক্রিনে দুই রঙের (pigment) ইলেকট্রনিক ইংক সিস্টেম মূলত লাখ লাখ ক্ষুদ্র মাইক্রো ক্যাপসুল দ্বারা গঠিত। এসব ক্যাপসুলের ব্যাস মানুষের চুলের মতো। এই ছোট্ট ক্যাপসুলগুলোর ভেতরটা স্বচ্ছ তরল দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। আর এর মধ্যে সাদা ও কালো রঙের (pigment) কনাগুলো ভাসমান অবস্থায় থাকে। তবে সাদা কণাগুলো পজিটিভ চার্জ ও কালো রঙের কণাগুলো নেগেটিভ চার্জ যুক্ত থাকে।

ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

সহজ করে বললে একটি কাঁচের বল কল্পনা করুন। এর ভেতরে পানি দিয়ে পূর্ণ। আর সঙ্গে আছে কিছু কালো ও সাদা বল। সাদা বলগুলো পজিটিভ চার্জ ও কালো বলগুলো নেগেটিভ চার্জযুক্ত। আর এই বলগুলো এতে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ হয়, তখনই সংশ্লিষ্ট কণাগুলো উপরে চলে আসে। ডিসপ্লে তে তা দর্শকের কাছে দৃশ্যমান হয়। এতে করে পৃষ্ঠাটিকে কালো বা সাদা দেখায়। এরকম অনেকগুলো ক্যাপসুলের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে ডিসেপ্লেতে আকাঙ্ক্ষিত চিত্র বা লেখা দেখা যায়।

ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

আরও মজার বিষয়, এই প্রযুক্তির ফলে প্রদর্শিত ছবি বা টেক্সট ধরে রাখতে কোনও বিদ্যুতের প্রয়োজন না। আর এই টেক্সট বা ইমেজগুলো প্রদর্শনের সময় সেখানে আলাদা আলো বা রশ্নিরও প্রয়োজন হয় না। অন্যভাবে বললে ধরুন, এই ই-বুক রিডারে আপনি কোনও বই পড়ছেন। তাহলে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হচ্ছে। এটা যতক্ষণ থাকছে ততক্ষণ আর বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে না। এই বিশেষ প্রযুক্তির কারণেই এই ডিভাইসগুলোতে বিদ্যুৎ খরচ হয় খুবই কম। বলা যায়, একটি AA ব্যাটারি (যা পেন্সিল ব্যাটারি নামেও পরিচিত) ১২ ইঞ্চি সাইজের একটি ডিভাইসে টানা ২০ ঘণ্টা ধরে পাতা (প্রায় ১ হাজার পাতা) উল্টিয়ে বই পড়তে পারবেন। অন্যদিকে একটি এলসিডি ডিসপ্লেতে ওই সময় (২০ ঘণ্টা) বই পড়ার জন্য ৩৬টি AA ব্যাটারি প্রয়োজন হবে।

ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

এই ই-ইংক স্ক্রিনকে রিফ্লেক্টিভ স্ক্রিনও বলা হয়। অর্থাৎ আপনি যখন মোবাইল বা ট্যাবে কিছু দেখছেন সেটা নিজস্ব আলো বা রশ্নি আপনার চোখে প্রতিবিম্ব তৈরিতে সহায়তা করে। কিন্তু এই স্ক্রিনে মূলত বাইরের আলো যেমন ঘরের বাতি কিংবা সূর্যের আলোর সাহায্যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করতে পারে। মূলত একারণেই বই পড়ার মতো ফিলটা এই ডিভাইসগুলোতে পাওয়া যায়। আর এর ফলে অন্যান্য ডিসপ্লের তুলনায় ই-ইংক ডিসপ্লে আপনার চোখের জন্য অনেক কম ক্ষতিকর। বর্তমান সময়ে ইলেকট্রিক ডিভাইসের কারণে যাদের ‘ড্রাই আই’ সমস্যা দেখা দেয়, তাদের জন্য চিকিৎসকরাও এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ই-ইংক স্ক্রিন কী, কেন ব্যবহার করবেন?

অবশ্য আপনি চাইলে অন্ধকারে ডিভাইসের স্ক্রিনের আলো বাড়িয়েও ডিভাইসটি চালাতে পারবেন। আর বাইরে আলো থাকলে তা কমিয়ে রাখতে পারবেন। অপশনটি একদম আপনার মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমানো-বাড়ানোর মতোই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are makes.